প্রচলিত ও অপ্রচলিত বিভিন্ন ধরনের মাদক এখন অনলাইনে বেচাকেনা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন মাদক কারবারি ও মাদকসেবীরা। লেনদেন হচ্ছে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও। এ ছাড়া ডার্কওয়েবে মাদক বেচাকেনা হচ্ছে ও বিটকয়েনে মাদকের লেনদেন করছেন কারবারিরা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২৩-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, মূলত প্রযুক্তির কল্যাণে সারা বিশ্বের মধ্যে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে গেছে। এর ফলে সারা বিশ্বেই মাদকের বাজার যেমন বড় হচ্ছে, তেমনি নতুন নতুন মাদক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে নতুন উদ্বেগও তৈরি করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অপ্রচলিত মাদক যেমন এলএসডি, ডিওবি, কেটামিন, ম্যাজিক মাশরুম ধরা পড়ছে। এই মাদকগুলো আসছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো থেকে।
এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘মাদকের আগ্রাসন দৃশ্যমান, প্রতিরোধেই সমাধান।’
দেশে প্রচলিত মাদকের পাশাপাশি অপ্রচলিত অনেক মাদক ছড়িয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, বিদেশে গিয়ে অনেকে অপ্রচলিত বিভিন্ন মাদকে আসক্ত হচ্ছেন। তাঁরা দেশে এসব অপ্রচলিত মাদক ছড়িয়ে দেওয়ার কাজও করছেন। এমনকি কেউ কেউ এসব মাদক দেশে এসে তৈরি করে বাজারে ছড়াচ্ছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিব্লটার পেপার বা নকশা করা বিশেষ কাগজে এলএসডি মেশানো হয় |মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণদপ্তরের উপপরিচালক (নিরোধ শাখা) মানজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত মাদক যেমন এলএসডি, ডিওবি, কেটামিন, ম্যাজিক মাশরুম ধরা পড়েছে। এই মাদকগুলো আসছে ইউরোপ–আমেরিকাসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো থেকে।
ডিএনসির ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, বিদেশে পড়তে যাওয়াদের কেউ কেউ অপ্রচলিত বিভিন্ন মাদকে আসক্ত হন। তাঁদের অনেকেই মাদকসেবী বন্ধুদের জন্য কুরিয়ার সার্ভিসে পার্সেল করে এসব মাদক বিদেশ থেকে পাঠান।
আইসে উদ্বেগ বাড়ছে
ডিএনসির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে দেশে বিপুল পরিমাণ আইস আসছে। এটি মূলত ইয়াবা তৈরির মূল উপাদান। এটি ইয়াবার চেয়েও মারাত্মক। ২০২০ সালের পর থেকে এই মাদক মিয়ানমার থেকে দেশে নিয়ে আসছে মাদক পাচারকারী চক্র। যাঁরা মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনছেন, তাঁরাই একই পথে (রুট) আইস নিয়ে আসছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, আইস উদ্ধারের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে আইস উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ৩৭ কেজি। পরের বছর আইস উদ্ধার হয় ১১৩ কেজি আর সর্বশেষ ২০২৩ সালে আইস উদ্ধার বেড়ে হয় ১৮৭ কেজি।
ইয়াবা ও হেরোইন উদ্ধারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩–এ ইয়াবা উদ্ধারের পরিমাণ কমেছে। ২০২২ সালে ইয়াবা উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৫ হাজার পিস। আর গত বছর উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ২৯ লাখ ৭৭ হাজার পিস। তবে হেরোইন উদ্ধারের পরিমাণ দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বেড়েছে। ২০২২ সালে হেরোইন উদ্ধার হয়েছিল ৩৩৮ কেজি। আর গত বছর হেরোইন উদ্ধার হয়েছে ৭০১ কেজি।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, নানা কৌশলে এবং নানা উপায়ে দেশে প্রচলিত এবং অপ্রচলিত মাদকের বিস্তার ঘটছে। এগুলো প্রতিরোধ করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কৌশল এবং পদক্ষেপ সঠিক নয়। ফলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তদন্তেও মাদকের উৎস, রুট এবং মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম আসছে না।