আবির হুসাইন নাঈম (১৬) ও নূর হোসেন (৬)। দুই ভাইয়ের শরীরে জন্ম থেকে বাসা বেঁধেছে বিরল চর্মরোগ। তাদের কষ্ট দেখে দিশেহারা চা দোকানি বাবা হাবিবুর রহমান ও গৃহিণী মা রাবেয়া বেগম। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার শুকুরহাটা গ্রামে তাদের বাড়ি।
ধারদেনা, মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে সন্তানদের চিকিৎসার চেষ্টা করেছেন। ফরিদপুর, ঢাকা থেকে ভারত পর্যন্ত গেছেন। অর্থ সংকটে বেশি দূর এগোতে পারেনি এই পরিবার। ভিটাবাড়ি ছাড়া বাকি সব হারিয়ে দুই সন্তানের চিকিৎসা এখন বন্ধ।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিশু দুটির চোখ, মুখ, হাত, পা, নখসহ পুরো শরীরের সব জায়গা ফেটে গিয়ে রক্তাক্ত ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। কিছুতেই গরম সহ্য করতে পারে না তারা। দিনে ৩-৪ বার গোসল করাতে হয়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় শরীরে পানি ঢালতে হয়, শরীর ভিজিয়ে রাখতে। অনেক সময় রক্ত বের হতে থাকলে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। বেশির ভাগ সময়ই হাত-পা কুঁকড়ে ধরে আসে। ওদের শারীরিক এই কষ্ট দেখে মা-বাবা আর সইতে পারছেন না। সমাজের হৃদয়বান মানুষের সহায়তা কামনা করছেন তারা।
নাইম ২৭ পারা কোরআনে হাফেজ। ইছাপাশা কাদিরিয়া হাফিজিয়া নূরানি মাদ্রাসা ও এতিমখানা হেফজ বিভাগের ছাত্র। নাঈম বলে, শরীরে অনেক কষ্ট, ঠিকমতো হাঁটতে পারি না। মা-বাবা অনেক চেষ্টা করেছেন। তাদের আর কষ্ট দিতে চাই না বলে কোনো কষ্টের কথা আর বলি না। আমারও মন চায় অন্যদের মতো সুস্থভাবে চলাফেরা করতে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জন্মের পরপরই তাদের শরীরে এই রোগ দেখা দেয়। বাংলাদেশ ও ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ১০ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে পরিবারটির। ভারতের ভেলোরে সিএমসি হাসপাতালের চিকিৎসকরা আবার সেখানে চিকিৎসার জন্য যেতে বললেও অর্থ সংকটে যাওয়া হয়নি।
শুকুরহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) অনুপ কুমার সরকার বলেন, ‘আবির হুসাইন আগে আমাদের স্কুলে পড়ত। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিল। ছোট ছেলেটিকে (নুর হোসেন) সবাই ভয় পায়। তার সঙ্গে কেউ মিশতে চায় না বলে তাকে স্কুলে ভর্তি করানো যাচ্ছে না।’
ইছাপাশা কাদিরিয়া হাফিজিয়া নূরানি মাদ্রাসা ও এতিমখানার মোহতামিম মুফতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাদের এখানে যখন আবির হুসাইন প্রথম ভর্তি হয় তখন অনেকেই তাকে এড়িয়ে চলত। এখন সে সমস্যা নেই, তাকে সবাই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছে। ছাত্র হিসেবে সে অনেক মেধাবী। তার এখন ভালো চিকিৎসা দরকার।’
হাবিবুর রহমান জানান, দুই সন্তানকে চিকিৎসা করাতে সহায় সম্বল সব ফুরিয়েছি। এখন ভিটাটুকু ছাড়া কিছু নেই। সন্তানদের চিকিৎসা করাতে ছুটতে হয় ঢাকায়। নিজের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মাস হলো তাদের চিকিৎসা একেবারেই বন্ধ রয়েছে।
মা রাবেয়া বেগম জানান, স্বাভাবিক জন্ম নেওয়ার পাঁচ মিনিট পর থেকে শিশুদের গায়ের রং কালো হয়ে যায়। এরপর এভাবেই শরীরের কষ্ট নিয়ে তাঁর সন্তান দুটি বড় হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ছোট ছেলে নূর হোসেনের সঙ্গে সমবয়সীরা খেলাখুলা করতে চায় না। তার সবসময় মন খারাপ থাকে। মা হিসেবে মেনে নিতে পারি না।’

আলফাডাঙ্গা সদর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বুলবুল বলেন, ‘ওদের দিকে তাকানো যায় না। খুবই মায়া লাগে। সমাজে এখনও অনেক বিত্তবান ভালো মানুষ আছেন, আশা করি তারা এই পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন। আমরাও চেষ্টা করছি যতটুকু পারছি সাহায্য করছি।’
ইউএনও রাসেল ইকবাল বলেন, নাঈম আর নূরের চিকিৎসা করাতে উপজেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়াবে। সাহায্যের জন্য–মো. হাবিবুর রহমান, হিসাব নম্বর: ২৮০১৯২২৯৬৮০০১, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, আলফাডাঙ্গা শাখা, ফরিদপুর এবং বিকাশ ও নগদ ০১৯২৩৫২৯৯৩২ (ব্যক্তিগত)।
NEWS21 staff Musabbir khan 





















