ঢাকা ০৮:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’— কী আছে এই সিনেমায়?

  • NEWS21 staff Musabbir khan
  • আপডেট সময় : ০৫:২৪:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’— কী আছে এই সিনেমায়?

বলিউডের রঙিন দুনিয়ায় যুক্ত হচ্ছে আরও এক মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার। নাম ‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’। অক্ষয় শেরের পরিচালনায় নির্মিত এই সিনেমা দর্শককে নিয়ে যাবে এক অন্ধকারের জগতে, যেখানে সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ আর ন্যায়-অন্যায়ের সূক্ষ্ম সীমারেখা মিলেমিশে যায়। এটি কেবল অপরাধের গল্প নয়; এটি মানুষের অন্তর্জগতের অন্ধকার, অপরাধবোধ, ন্যায়বিচার এবং পাপ-পুণ্যের সূক্ষ্ম সীমারেখা নিয়ে তৈরি এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান।

‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’ সিনেমার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ইন্সপেক্টর বিশ্বাস ভগবৎ (আরশাদ ওয়ারসি), যিনি পেশাগত অভিজ্ঞতার কারণে কঠোর। কিন্তু তাঁর অন্তরের কোথাও রয়েছে ন্যায়বোধের শিকড়। একদিন স্থানীয় থানায় আসে এক তরুণী পুনমের নিখোঁজ হওয়ার মামলা। সাধারণ তদন্ত হিসেবে শুরু হলেও, ধীরে ধীরে উদ্ঘাটিত হয় এমন এক ভয়ংকর চিত্র, যা শহরের অন্ধকারে গড়ে ওঠা এক পতিতাবৃত্তি চক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। তদন্তের পথে বিশ্বাসের সাক্ষাৎ হয় এক কলেজ প্রভাষক সমীরের (জিতেন্দ্র কুমার) সঙ্গে। প্রথম দর্শনে তিনি বিনয়ী, শিক্ষিত এবং সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু যত তদন্ত এগোয়, স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে সমীরের ভেতরে লুকিয়ে আছে অন্য এক সত্তা।

একটি বিকৃত, অন্ধকার ‘রাক্ষস’। ‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’ সিনেমার গল্পের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো বিশ্বাস ও সমীরের মধ্যকার মানসিক টানাপোড়েন। একদিকে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ববোধ এবং সত্যের অনুসন্ধান, অন্যদিকে এক শিক্ষিত মানুষের বিকৃত মানসিকতা। এই দ্বন্দ্ব শুধু রোমাঞ্চকর নয়; বরং দর্শকের চিন্তা-ভাবনায়ও এক গভীর প্রভাব ফেলবে বলেই আশা করেন নির্মাতা অক্ষয় শের।

তিনি বলেন, ‘দর্শকদের ভাবনা ও চিন্তার গল্পটিকে প্রভাব ফেলার জন্য আমি সিনেমা ধীরে ধীরে রোমাঞ্চকর  টানাপোড়েন তৈরির চেষ্টা করেছি। ফলে সিনেমার সংলাপ, চোখের ভাষা এবং নীরব মুহূর্তগুলোই গল্পের সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী অংশ।’

আরশাদ ওয়ারসি এই সিনেমায় তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গম্ভীর চরিত্রে হাজির হয়েছেন। ‘ভগবৎ’-এ তিনি ক্লান্তি, হতাশা এবং ন্যায়ের প্রতি অটল দায়বদ্ধতার সমন্বয় ঘটিয়েছেন।

জিতেন্দ্র কুমার, যিনি আগে হালকা ঘরানার চরিত্রে জনপ্রিয় ছিলেন, এখানে এক ভয়ংকর এবং রহস্যময় চরিত্রে পরিণত হয়েছেন। এই অভিনয় দর্শককে সমীরের অন্ধকার ও রহস্যময়তার মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। সিনেমার নারী চরিত্রগুলোও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। পুনমের গল্প একদিকে নিখোঁজ নারীদের কণ্ঠস্বরের প্রতীক, অন্যদিকে সমাজের চোখে ‘অপরাধী’ নারীদের প্রতি প্রশ্ন তোলে।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সিনেমার চিত্রনাট্যটি ধীরে ধীরে উদ্ঘাটিত হয়, যেন পেঁয়াজের স্তর একে একে খোলা হচ্ছে। প্রতিটি দৃশ্য দর্শকের মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং শেষ পর্যন্ত একটি অব্যক্ত অশান্তি তৈরি করে। সিনেমাটোগ্রাফার অভিষেক নায়ার আলো-ছায়ার কনট্রাস্ট, স্লো মোশন ফ্রেম এবং শহরের রাতের দৃশ্যগুলো অত্যন্ত সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভিজ্যুয়াল শৈলী দর্শককে শুধু গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রাখে না; বরং চরিত্রগুলোর মানসিক অবস্থারও প্রতিফলন ঘটায়।

সিনেমার আবহ সংগীত গল্পের আবেগকে আরও গভীর করেছে। কখনও অস্বস্তিকর, কখনও বিষণ্ন, সবসময় প্রাসঙ্গিক। সংগীত পরিচালক সৌরভ রায় সাসপেন্স এবং মানসিক চাপের আবহ তৈরি করতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’ শুধু একটি অপরাধ-থ্রিলার নয়, এটি দর্শককে নৈতিক এবং দার্শনিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। সিনেমার শেষে দর্শককে ভাবতে হয়। আসলে কে ‘রাক্ষস’? সমাজের অপরাধী, না কি সেই মানুষটি, যে ন্যায় প্রতিষ্ঠার নামে নিজেই অন্ধকারে ডুবে যায়? এই প্রশ্নই ‘ভগবৎ’-কে কেবল থ্রিলার নয়, এক দার্শনিক অভিজ্ঞতা বানায়।

আরশাদ ওয়ারসি ও জিতেন্দ্র কুমারের অভিনয়, অক্ষয় শেরের দৃঢ় পরিচালনা, আর ভিজ্যুয়াল ও সংগীতের ঘন আবহ মিলিয়ে ‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’ নিঃসন্দেহে ২০২৫ সালের অন্যতম আলোচিত সিনেমা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

বিশেষ করে মানসিক থ্রিলার পছন্দ করেন এমন দর্শকরা এই সিনেমা থেকে এক নতুন অভিজ্ঞতা পাবেন বলে আশা করাই যায়। কারণ, এরই মধ্যে সিনেমাটির টিজার আর টেলার নিয়ে দর্শকরা বেশ ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। আরশাদ ওয়ারসি ও জিতেন্দ্র কুমারের অভিনয়, অক্ষয় শেরের দৃঢ় পরিচালনা, আর ভিজ্যুয়ালের ঘন আবহ মিলিয়ে ‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’ নিঃসন্দেহে ২০২৫ সালের অন্যতম আলোচিত সিনেমা হয়ে উঠবে। এখন বাকিটা জানা যাবে আগামীকাল। কারণ আগামীকাল থেকে সিনেমাটি থেকে জি৫ প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে।

ট্যাগস :

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’— কী আছে এই সিনেমায়?

আপডেট সময় : ০৫:২৪:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

বলিউডের রঙিন দুনিয়ায় যুক্ত হচ্ছে আরও এক মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার। নাম ‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’। অক্ষয় শেরের পরিচালনায় নির্মিত এই সিনেমা দর্শককে নিয়ে যাবে এক অন্ধকারের জগতে, যেখানে সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ আর ন্যায়-অন্যায়ের সূক্ষ্ম সীমারেখা মিলেমিশে যায়। এটি কেবল অপরাধের গল্প নয়; এটি মানুষের অন্তর্জগতের অন্ধকার, অপরাধবোধ, ন্যায়বিচার এবং পাপ-পুণ্যের সূক্ষ্ম সীমারেখা নিয়ে তৈরি এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান।

‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’ সিনেমার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ইন্সপেক্টর বিশ্বাস ভগবৎ (আরশাদ ওয়ারসি), যিনি পেশাগত অভিজ্ঞতার কারণে কঠোর। কিন্তু তাঁর অন্তরের কোথাও রয়েছে ন্যায়বোধের শিকড়। একদিন স্থানীয় থানায় আসে এক তরুণী পুনমের নিখোঁজ হওয়ার মামলা। সাধারণ তদন্ত হিসেবে শুরু হলেও, ধীরে ধীরে উদ্ঘাটিত হয় এমন এক ভয়ংকর চিত্র, যা শহরের অন্ধকারে গড়ে ওঠা এক পতিতাবৃত্তি চক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। তদন্তের পথে বিশ্বাসের সাক্ষাৎ হয় এক কলেজ প্রভাষক সমীরের (জিতেন্দ্র কুমার) সঙ্গে। প্রথম দর্শনে তিনি বিনয়ী, শিক্ষিত এবং সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু যত তদন্ত এগোয়, স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে সমীরের ভেতরে লুকিয়ে আছে অন্য এক সত্তা।

একটি বিকৃত, অন্ধকার ‘রাক্ষস’। ‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’ সিনেমার গল্পের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো বিশ্বাস ও সমীরের মধ্যকার মানসিক টানাপোড়েন। একদিকে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ববোধ এবং সত্যের অনুসন্ধান, অন্যদিকে এক শিক্ষিত মানুষের বিকৃত মানসিকতা। এই দ্বন্দ্ব শুধু রোমাঞ্চকর নয়; বরং দর্শকের চিন্তা-ভাবনায়ও এক গভীর প্রভাব ফেলবে বলেই আশা করেন নির্মাতা অক্ষয় শের।

তিনি বলেন, ‘দর্শকদের ভাবনা ও চিন্তার গল্পটিকে প্রভাব ফেলার জন্য আমি সিনেমা ধীরে ধীরে রোমাঞ্চকর  টানাপোড়েন তৈরির চেষ্টা করেছি। ফলে সিনেমার সংলাপ, চোখের ভাষা এবং নীরব মুহূর্তগুলোই গল্পের সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী অংশ।’

আরশাদ ওয়ারসি এই সিনেমায় তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গম্ভীর চরিত্রে হাজির হয়েছেন। ‘ভগবৎ’-এ তিনি ক্লান্তি, হতাশা এবং ন্যায়ের প্রতি অটল দায়বদ্ধতার সমন্বয় ঘটিয়েছেন।

জিতেন্দ্র কুমার, যিনি আগে হালকা ঘরানার চরিত্রে জনপ্রিয় ছিলেন, এখানে এক ভয়ংকর এবং রহস্যময় চরিত্রে পরিণত হয়েছেন। এই অভিনয় দর্শককে সমীরের অন্ধকার ও রহস্যময়তার মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। সিনেমার নারী চরিত্রগুলোও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। পুনমের গল্প একদিকে নিখোঁজ নারীদের কণ্ঠস্বরের প্রতীক, অন্যদিকে সমাজের চোখে ‘অপরাধী’ নারীদের প্রতি প্রশ্ন তোলে।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সিনেমার চিত্রনাট্যটি ধীরে ধীরে উদ্ঘাটিত হয়, যেন পেঁয়াজের স্তর একে একে খোলা হচ্ছে। প্রতিটি দৃশ্য দর্শকের মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং শেষ পর্যন্ত একটি অব্যক্ত অশান্তি তৈরি করে। সিনেমাটোগ্রাফার অভিষেক নায়ার আলো-ছায়ার কনট্রাস্ট, স্লো মোশন ফ্রেম এবং শহরের রাতের দৃশ্যগুলো অত্যন্ত সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভিজ্যুয়াল শৈলী দর্শককে শুধু গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রাখে না; বরং চরিত্রগুলোর মানসিক অবস্থারও প্রতিফলন ঘটায়।

সিনেমার আবহ সংগীত গল্পের আবেগকে আরও গভীর করেছে। কখনও অস্বস্তিকর, কখনও বিষণ্ন, সবসময় প্রাসঙ্গিক। সংগীত পরিচালক সৌরভ রায় সাসপেন্স এবং মানসিক চাপের আবহ তৈরি করতে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’ শুধু একটি অপরাধ-থ্রিলার নয়, এটি দর্শককে নৈতিক এবং দার্শনিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। সিনেমার শেষে দর্শককে ভাবতে হয়। আসলে কে ‘রাক্ষস’? সমাজের অপরাধী, না কি সেই মানুষটি, যে ন্যায় প্রতিষ্ঠার নামে নিজেই অন্ধকারে ডুবে যায়? এই প্রশ্নই ‘ভগবৎ’-কে কেবল থ্রিলার নয়, এক দার্শনিক অভিজ্ঞতা বানায়।

আরশাদ ওয়ারসি ও জিতেন্দ্র কুমারের অভিনয়, অক্ষয় শেরের দৃঢ় পরিচালনা, আর ভিজ্যুয়াল ও সংগীতের ঘন আবহ মিলিয়ে ‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’ নিঃসন্দেহে ২০২৫ সালের অন্যতম আলোচিত সিনেমা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

বিশেষ করে মানসিক থ্রিলার পছন্দ করেন এমন দর্শকরা এই সিনেমা থেকে এক নতুন অভিজ্ঞতা পাবেন বলে আশা করাই যায়। কারণ, এরই মধ্যে সিনেমাটির টিজার আর টেলার নিয়ে দর্শকরা বেশ ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। আরশাদ ওয়ারসি ও জিতেন্দ্র কুমারের অভিনয়, অক্ষয় শেরের দৃঢ় পরিচালনা, আর ভিজ্যুয়ালের ঘন আবহ মিলিয়ে ‘ভগবৎ চ্যাপ্টার ওয়ান: রাক্ষস’ নিঃসন্দেহে ২০২৫ সালের অন্যতম আলোচিত সিনেমা হয়ে উঠবে। এখন বাকিটা জানা যাবে আগামীকাল। কারণ আগামীকাল থেকে সিনেমাটি থেকে জি৫ প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে।