রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকারের হিমাগারে এক তরুণ, নারী ও কিশোরীকে বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে পবা উপজেলার বায়া এলাকায় সরকার কোল্ড স্টোরেজের অফিসকক্ষে আটকে রেখে তাদের নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ জনতা অফিস কক্ষটিতে ভাঙচুর চালিয়েছেন।
এলাকাবাসী মোহাম্মদ আলীর ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার জিকো এবং মেয়ে আঁখি ও হাবিবাকে অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায়।
এর আগে পুলিশ নির্যাতনে আহত তিনজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠায়। তাদের বাড়ি পবার কুঠিপাড়া গ্রামে। নির্যাতনের শিকার তরুণ রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই কিশোরী ও নারী তার খালাতো বোন। নির্যাতনের ঘটনায় ওই তরুণের ভাই থানায় মামলা করেছেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে তিনজনকে লাঠি, বাঁশ, হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে শরীরে সেফটিপিন ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়।
দুপুরে হিমাগারে বসে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার ওই নারীর কোলে শিশুসন্তান ছিল। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। তার কান দিয়ে রক্ত ঝরছিল। আহত মেডিকেল শিক্ষার্থীর দুই হাতে জখম এবং পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। আর ওই কিশোরীর ঠোঁট দিয়ে রক্ত ঝরছিল।
ওই নারী জানান, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তাদের পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। এ বিষয়টি তার ছেলে-মেয়েরা ভালোভাবে নিতেন না। তাদের সন্দেহ, মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তাকে ফোন করে হিমাগারে ডাকা হয়। তখন তিনি তার খালাতো ভাই ও ছোট বোনকে নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও মেয়েরা তাদের ধাক্কা দিতে দিতে অফিস কক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। এরপর কর্মচারীদের সহায়তায় তাদের নির্যাতন করা হয়। এ সময় দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল এবং তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।
পরে স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনতে পেয়ে এগিয়ে যান। তারা অফিসের দরজা খুলতে বললেও খোলা হচ্ছিল না। একপর্যায়ে দরজা খোলা হয়। পরে পুলিশ এলে তাদের মোবাইল ফোনগুলো ফেরত দিতে দেখা যায়।
নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরী জানায়, মোহাম্মদ আলীর দুই মেয়ে তার বোনের সারা শরীরে সেফটিপিন দিয়ে ফুটিয়ে নির্যাতন করেছে।
এদিকে বেলা ১১টা থেকে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা হিমাগারের ভেতর মোহাম্মদ আলীর ছেলে-মেয়েদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। তারা তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। তবে বের করলেই হামলার শঙ্কায় পুলিশ তাদের নিয়ে যাচ্ছিল না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুর ২টার দিকে স্থানীয়রা অফিস কক্ষের সিসি ক্যামেরা ও কাচের জানালা ভেঙে ফেলেন। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়া হয়। তারা আসার পর তিনজনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
বিমানবন্দর থানার ওসি ফারুক হোসেন জানান, নির্যাতনে জড়িত তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।