ট্রফি উন্মোচন শেষে জাকের আলীর কাঁধে হাত রেখে মাঠে প্রবেশ করেন রশিদ খান। দেখে কারোই মনে হবে না, ক্রিকেট মাঠে তারা একে অন্যের প্রতিপক্ষ। আসলে ম্যাচের বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের মধ্যে একটা সম্পর্ক থাকেই। একই হোটেলে থাকার কারণে খোশগল্পও হয়। তা না হলে এশিয়া কাপের গ্রুপ ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারের পর আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খান আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে যে অসৌজন্যতা দেখিয়েছিলেন, এরপর জাকেরদের কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। ওসব কিছু হয়নি, মানে সব ভুলে নতুন করে পথচলা শুরু উভয় দলের। এই যে আজ থেকে শারজাহর আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যে তিন ম্যাচ টি২০ সিরিজের পর্দা উঠবে, তাতে এশিয়া কাপের রেশ কমবেশি থাকবেই। আফগানরা চেষ্টা করবে সাম্প্রতিক হারের প্রতিশোধ নিতে। বাংলাদেশের লক্ষ্য থাকবে জয় দিয়ে শুরু করে সিরিজ জিতে নেওয়া।
এই সিরিজ উভয় দলের জন্যই বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ। যেখানে জয়-পরাজয়ের পাশাপাশি দল সমন্বয়ের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইনটা নতুন করে দেখার আছে। চোটের কারণে লিটন কুমার দাস খেলতে পারছেন না। তাঁর জায়গায় সৌম্য সরকারকে দলে নেওয়া হলে ভিসা জটিলতায় গতকাল পর্যন্ত শারজাহতে যেতে পারেননি। বাঁহাতি এই ব্যাটার না থাকলেও একাদশ সাজাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, লিটনকে ছাড়াও দলে ১৫ জন ক্রিকেটার রয়েছেন।
এশিয়া কাপেও ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে লিটনকে ছাড়া খেলেছেন জাকেররা। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে বলে আশা ক্রিকেটারদের। নেতৃত্বে থেকে ভালো কিছুর প্রত্যাশা উইকেটরক্ষক এই ব্যাটারের, ‘যেহেতু দায়িত্ব এসেছে, তা পালন করতে হবে। আমার দায়িত্ব ভালোভাবে পালনের চেষ্টা করব; গেমপ্ল্যান অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব।’ এশিয়া কাপে নুরুল হাসান সোহানকে উইকেট কিপিংয়ে রাখার পক্ষে-বিপক্ষে মত ছিল। সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চেয়েছিলেন, সোহান কিপিং করেন। অধিনায়ক জাকের নিজেই কিপিং করতে চাওয়ায় প্রধান কোচ ফিল সিমন্সও তাতে সমর্থন দেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সোহানকে কিপিংয়ে রাখা হলে ভালো হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে বাদ পড়ায় রশিদ খানরা বিশ্রাম নিয়ে সতেজ হয়ে ফিরেছেন। জাকেররা সেখানে লম্বা সময় আমিরাতে। মরুর বৈরী পরিবেশে লম্বা সময় ধরে থাকায় কিছুটা একঘেয়ে লাগতে পারে। তবে ওসব ঝেরে নতুন উন্মাদনায় মাঠে নামতে হবে টাইগারদের। কারণ, টি২০ সিরিজে জয়-পরাজয়ের প্রভাব ওয়ানডে সিরিজে থাকবে। এ ছাড়া দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনুষ্ঠেয় তিন ম্যাচ টি২০ সিরিজেও ভালো করার পাথেয় হিসেবে কাজ করবে শারজাহর সিরিজটি। এই বিবেচনায় সাইফ হাসানরা নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। বিপিএল, গ্লোবাল টি২০ ও ‘এ’ দলের সফরে ভালো খেলায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হোম সিরিজের দলে ডাক পান বাঁহাতি এই ওপেনার। সিলেটে ভালো করায় এশিয়া কাপেও ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। প্রত্যাশার চেয়েও ভালো পারফরম্যান্স করেন ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে। গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক রশিদ খানও প্রশংসায় ভাসালেন সাইফকে।
ব্যাটিং অর্ডারে সাইফের সঙ্গে তানজিদ হাসান তামিম খেলতে পারেন। পারভেজ হোসেন ইমন তিন নম্বরে লিটনের ভূমিকা নেবেন। তাওহীদ হৃদয়, জাকের, সোহানরা পরের অর্ডারে। বোলিং বিভাগে মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিবের সঙ্গে বাঁহাতি নাসুম আহমেদ ও শেখ মেহেদিকে দেখা যেতে পারে। এশিয়া কাপে আফগানদের বিপক্ষে নাসুমই জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। দ্বিপক্ষীয় সিরিজেও চনমনে দেখা যেতে পারে নাসুমকে।