বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:২৪ অপরাহ্ন

সব দেশ ছাড়িয়ে ডেঙ্গুতে এগিয়ে দেশ

আরফান হাসান শুভ
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
সব দেশ ছাড়িয়ে ডেঙ্গুতে এগিয়ে দেশ

পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বেশি। দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ব্রাজিলে চলতি বছরের ১ জুলাই পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫২২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং দেশটিতে মৃত্যুর হার ০.০৫ শতাংশ। এ সময় পর্যন্ত দেশটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ২৪৯ জন। বাংলাদেশে চলতি বছরের ১ জুলাই পর্যন্ত মোট আট হাজার ২৪৮ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং একই সময়ের মধ্যে রোগটিতে মারা গেছে ৫০ জন। বাংলাদেশে ১ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যুর হার ছিল ০.৬১ শতাংশ। কিন্তু গতকাল বুধবার ১৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ১৭২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রিপোর্ট অনুসারে, একই সময়ের মধ্যে দেশে ডেঙ্গু রোগে মারা গেছে ৭৬৭ জন এবং এ দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ০.৪৯ শতাংশ।

এ দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার ৯৪৪ জন। মৃত ১৫ জনের মধ্যে ঢাকায় ছয়জন এবং ঢাকার বাইরে ৯ জন রয়েছে। অন্য দিকে একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৮২৩ জন ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে দুই হাজার ১২১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গতকাল একই সময়ের মধ্যে দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৭৬৭ জন এবং মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ১৭২ জন।

চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি হোক সর্বত্রই ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় যথেষ্ট অবহেলা এবং সুযোগ-সুবিধা কম রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: এম মোজাহেরুল হক বলেন, ‘পৃথিবীর মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। আমরা যদি ব্রাজিলের উদাহরণ টানি তা হলে দেখব দেশটিতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু সে তুলনায় সেখানে মৃত্যুর হার বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। এমনকি আর্জেন্টিনাতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। এর কারণ হিসেবে বলব, সেখানে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য একটা অ্যাফেক্টিভ ট্রিটমেন্ট (কার্যকর চিকিৎসা) চালু করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা তা করতে পারিনি। ফলে বাংলাদেশে মৃত্যু বেশি হচ্ছে। এখানে মানুষ কখন চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসবে সেটি নিয়েই মানুষের মধ্যে ভুল তথ্য রয়েছে।’

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘পরীক্ষায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তা নিশ্চিত হয়ে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হতে এলেও তাকে ভর্তি করা হয় না।’ তাকে বলা হয়, ‘যখন আপনি মুখে খাবার খেতে অসমর্থ হবেন তখনই হাসপাতালে ভর্তি হতে আসবেন।’ কিন্তু দেখা যায়, ‘রোগী মুখে খাবার খেতে অসমর্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে এলে তখন একই ডাক্তাররা বলেন, আপনি তো দেরি করে ফেলেছেন।’ তিনি বলেন, একই কথা শোনা যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিদের মুখ থেকে। তারাও বলছেন, ‘ডেঙ্গুতে যারা মারা যাচ্ছে তারা দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকে। ফলে তাদের অনেক সময় বাঁচানো যায় না।’ তিনি বলেন, ডেঙ্গু হলেই হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করতে না পারলে মানুষের মৃত্যু রোধ করা যাবে না।

দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে চলতি বছরের প্রথম থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত মোট ২৯ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭ জনের ডেঙ্গু কেস রেকর্ড করা হয়। দেশগুলোতে একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৩৪৮ জন। এ অঞ্চলে ১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ০.০৪ শতাংশ। এ অঞ্চলে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে ৩০৫ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত ছয় মাসে ব্রাজিলে সবচেয়ে বেশি ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫২২ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ২৪৯ জন এবং মৃত্যুর হার ০.০৫ শতাংশ।

উল্লেখ্য, ব্রাজিলের জনসংখ্যা ২১ কোটি ৬৪ লাখ ২২ হাজার। আর্জেন্টিনায় ১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ৪৩১ জন মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জন এবং মৃত্যু হার ছিল ০.০৫ শতাংশ। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, কলাম্বিয়া, কোস্টারিকা, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, মেক্সিকো, ভেনিজুয়েলা, আর্জেন্টিনা, পানামা, পেরু, পুয়ের্তেরিকো ও নিকারাগুয়া। এসব অঞ্চলে ডেঙ্গু ভাইরাসের যে চারটি সেরুটাইপ রয়েছে সবগুলো দিয়েই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশেও ডেঙ্গুর চারটি সেরুটাইপ কার্যকর রয়েছে। এসব দেশে এত মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে ডেঙ্গু মহামারী (পেন্ডেমিক) ঘোষণা করা হয়নি, বরং ওই অঞ্চলে ডেঙ্গু এখনো আঞ্চলিক বা স্থানীয় রোগ হিসেবেই রয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সর্বত্রই ডেঙ্গু বিস্তৃত হয়েছে এবং এখানে ডেঙ্গু মহামারী আকারেই রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর