জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, চিরতারুণ্যের প্রতীক হয়ে শেখ কামাল প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেঁচে থাকবেন। বাংলাদেশের উদীয়মান বহুমাত্রিক প্রতিভা ও মেধার অধিকারী শেখ কামাল ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও নাট্যাঙ্গনে ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
শনিবার (৬ আগস্ট) লন্ডনের মিলার রোডের ইম্প্রেসান ইভেন্টস ভেন্যুতে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, শেখ কামাল ছিলেন প্রতিষ্ঠিত নাট্যকর্মী, খেলোয়াড় ও সংগঠক। আবাহনীর মতো আধুনিক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে তিনি সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন, নিষ্ঠা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার নজির স্থাপন করে গেছেন। তিনিই প্রথম বিদেশি কোচ নিয়ে এসে দেশীয় ক্রীড়াঙ্গনকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপনের চেষ্টা করেন।
স্পিকার বলেন, আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য শোকের মাস। এ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাতে প্রাণ যায় শেখ কামালেরও। মাত্র ২৬ বছর বয়সে শেখ কামাল নাটক, থিয়েটার, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুসরণযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
তিনি বলেন, শেখ কামাল ছিলেন তরুণ প্রজন্মের অহংকার। তার কাছে তরুণ প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে। শেখ কামালের কীর্তি-কর্ম অনুসরণ করে তরুণ সমাজকে ক্রীড়া-সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে শান্তি-সহনশীলতার শিক্ষা নিতে হবে।
স্পিকার বলেন, শেখ কামাল ছিলেন নিরহংকারী। রাষ্ট্রপতির ছেলে হয়েও তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। তরুণদের সঙ্গে অকপটে মিশেছেন। বাবাকে কাছ থেকে দেখেছেন, কিন্তু কাছে পেয়েছেন খুবই কম। কারণ বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান আমলে দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে।
‘বায়ান্ন সালের ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু যখন জেল থেকে ছাড়া পান, তখন শেখ কামাল সবেমাত্র কথা বলতে শিখেছেন। এর আগে তিনি তার বাবাকে সেভাবে দেখেননি। সে সময় হঠাৎ তিনি তার বড় বোন শেখ হাসিনাকে বলে ফেলেন, হাসু আপা, তোমার বাবাকে আমিও কী বাবা বলে ডাকতে পারি? তার এ কথা কত মর্মান্তিকভাবে আমাদের স্পর্শ করে!
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ২৫ মার্চ রাতেই শেখ কামাল মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়্যার কোর্সে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এরপর মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। পরবর্তীসময়ে তিনি জেনারেল ওসমানীর এইড-ডি-ক্যাম্প (এডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তরুণদের নিয়ে নানান সৃষ্টিশীল কাজে সম্পৃক্ত হন।
স্পিকার বলেন, শেখ কামাল স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন, যা দেশের সবচেয়ে পুরনো মিউজিক্যাল ব্যান্ড। থিয়েটার আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তিনি তার পরিবারের কাছ থেকেই এসব অনুপ্রেরণা পেতেনে।
এর আগে স্পিকার শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পাশাপাশি শেখ কামালের ওপর আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মোনা তাসনিমের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় তরুণ ব্রিটিশ বাংলাদেশি ক্রীড়া-সংস্কৃতি অনুরাগী মিরাজ সাদাত, ইউক্রেনিয়ান ক্রীড়া অনুরাগী আলবার্ট এডওয়ার্ড সালিমোভ, ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির মেম্বার সৈয়দ সাজিদুর রাহমান ফারুক ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাম্বাসেডর সৈয়দ শাহেদ রেজা অংশ নেন।
আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এছাড়া, ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্য সুলতান মাহমুদ শরীফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ হাসানসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।